রবিবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২

নিকোলাই অস্ত্রভস্কি ছিলেন সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদী লেখক

 


নিকোলাই আলেক্সিভিচ অস্ত্রভস্কি (রাশিয়ান: Никола́й Алексе́евич Остро́вский; ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯০৪ - ২২ ডিসেম্বর ১৯৩৬) ছিলেন ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদী লেখক। তিনি তার উপন্যাস ইস্পাত-এর (ইংরেজি:How the Steel Was Tempered)  জন্য সর্বাধিক পরিচিত।

নিকোলাই অস্ত্রভস্কি মনে করতেন, জীবন এক অনন্য সৃষ্টি, একে কোনোভাবেই হেলাফেলায় নষ্ট করা উচিত নয়। সংগ্রামময় এই জীবনের ধাপে ধাপে বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমরা সচেতন প্রয়াস করে থাকি নিজেদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। দায়িত্বে, সামাজিকতায়, কর্তব্যবোধ সম্পন্ন একজন ব্যক্তি কখনোই পিছপা হন না। যতই প্রতিবন্ধকতা আসুক তিনি দৃঢ় মনোবল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, মুখোমুখি হন, জয় করেন বা পরাজয় থেকে শিক্ষা নেন আবার ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য।

সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ায় যিনি সাহিত্য ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সম্মান অর্ডার অব লেনিন’-এ পুরস্কৃত হয়েছিলেন। মাত্র ৩২ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ছিল সংগ্রামমুখর। শ্রমিক পরিবারে জন্ম, বেড়ে ওঠা। সোভিয়েত বলশেভিক আদর্শকে জীবন দর্শন হিসেবে গ্রহণ করেন।

নিকোলাই অস্ত্রভস্কি মাত্র ১৩ বছর বয়সেই পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। বহুবার যুদ্ধে অংশ নেন। আহত হন। তাতেও দমে যাননি। কিন্তু মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে শেষে চোখ হারান দৈহিক শক্তি হারান। কিন্তু এই প্রতিবন্ধকতাময় জীবন যে তাকে পঙ্গু করে দেয় তা নয়। মহান লেনিনের আদর্শ থেকে তিনি শিখেছিলেন জীবন কত গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই আবার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা।

ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা থেকে শুরু করলেন নিজের লেখনী। জয় করলেন দুনিয়াকে, তার প্রথম উপন্যাস ইস্পাত দিয়ে। পাভেল নামের এক চরিত্র কিভাবে ছোট থেকেই সংগ্রাম করতে করতে বড় হচ্ছেন, বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছেন, শত্রুপক্ষ কে ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন, আবার এই সবের মধ্যে তিনি শারীরিক ভাবে প্রায় অকেজো হয়ে পড়ছেন, তবু ভাবছেন কিভাবে এই সমস্ত কিছুকে তুচ্ছ করে জীবনের আনন্দ পাওয়া যায় সামাজিক দায়িত্ব পালনে ব্রতী হওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে নিকোলাই তার নিজের জীবনকেই এই উপন্যাসের পাভেল চরিত্রের মধ্য দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন। জীবনের  শেষ পর্যায়ে সোভিয়েতের বড় বড় হাসপাতালে তার চিকিৎসা হলেও তাকে বাচাঁনো যায়নি। দুরারোগ্য ব্যাধি তার প্রাণ কেড়ে নেয়।

১৯৩৬ সালের ২২ সে ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু মৃত্যু হয়নি তার আদর্শের, তার সৃষ্টির। তিনি বলেছিলেন জীবন মানুষের সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ। আর জীবন মানুষ পায় মাত্র একটিবার। তাই এমনভাবে বাঁচতে হবে যাতে মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে মানুষ বলতে পারে আমি আমার সমগ্র জীবন ব্যায় করেছি মানুষের মুক্তি সংগ্রামে, মানুষকে ভালোবেসে।

জীবন এবং মৃত্যু সম্পর্কে নিকোলাই অস্ত্রভস্কির এই গভীর ধারণা তাই এখনও অসংখ্য সংগ্রামী মানুষের চলবার শক্তি এগিয়ে যাবার প্রেরণা। বিশ্বের দেশে দেশে পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বা ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রতিটি সংগ্রামে নিকোলাই এর জীবনবোধ আমাদের এগিয়ে দেবে প্রতিটি লড়াইয়ে। তিনি বাঙ্ময় হয়ে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে, আমাদের দৃপ্ত পথচলায়।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured Post

বাংলাদেশের পাখির তালিকা, A checklist of the birds of Bangladesh.

Oriental Magpie Robin; National Bird of Bangladesh বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর তালিকাটি অনেক সমৃদ্ধ। এদেশ পাখির দিক দিয়...